মো: নাইম তালুকদার : সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার জগদল ইউনিয়নের জগদল গ্রামে প্রায় ৭ কোটি টাকা ব্যয় বহুলের মাধ্যমে হাওর বাসীর জন্য নির্মিত হচ্ছে হাসপাতাল ভবন। হাসপাত ভবনে রয়েছে অনেক মূল্যবান জিনিসপত্র। হাওর পাড়ের মানুষজনের কল্যাণে হাসপাতালটি নির্মাণ হলে ও তা থেকে কোন চিকিৎসা পাচ্ছেন এলাকার সাধারণ মানুষজন। তবে বিভিন্ন মানুষজন অভিযোগ করে বলেন, পাটা পোতালের ঘসাঘসির কারণে তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে হাওর পাড়ের হাজার হাজার মানুষ।
সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার হাওরবেষ্টিত জগদল গ্রামে ২০১৩ সালে বিভিন্ন আমেজ ও উদ্দ্যিপনার মধ্য দিয়ে ২০ শয্যা হাসপাতালের উদ্বোধন করা হয়। সচেতন সমাজের উদ্দেগ না থাকায় জীর্ণশীর্ণ হয়ে দাড়িয়ে আছে ওই হাসপাতাল ভবনটি। প্রায় ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে হাসপাতাল ভবন নির্মাণ করা হলেও এখনও চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম চালু করা হয়নি।
জানা যায়, হাওর এলাকায় বর্ষাকালে চারদিকে পানি থাকায় দরিদ্র মানুষকে চিকিৎসাসেবা নিতে গিয়ে বিপাকে পড়তে হয়। সরাসরি সড়ক যোগাযোগ না থাকায় অনেক রোগীকে নৌকাযোগে উপজেলা সদরে গিয়ে চিকিৎসাসেবা নিতে কষ্টকর হয়ে উঠে। রাতের বেলায় হাওর পাড়ি দিয়ে চিকিৎসাসেবা নেয়া অসম্ভব। এ অবস্থায় জগদল ইউনিয়ন ও আশপাশের ৪০টি গ্রামের লোকজনের কাছে চিকিৎসাসেবা পৌঁছে দিতে হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। দিরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, ২০০৫-০৬ অর্থবছরে তৎকালীন সরকারের আমলে জগদল ইউনিয়নে ২০ শয্যাবিশিষ্ট একটি অত্যাধুনিক হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। ২০০৬ সালে হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করা হয়। হাসপাতালের অবকাঠামো নির্মাণ কাজ শেষ করে ২০১৩ সালে ২৩ অক্টোবর এ হাসপাতালটি উদ্বোধন করা হয়।
সরজমিন ঘুরে দেখা যায়, হাসপাতালের প্রধান ফটক ও স্টোর রুমসহ সব কক্ষেই তালা ঝুলছে। লোকবল না থাকায় হাসপাতালের ভবনটির অবস্থা করুন। ইটের পরতে পরতে জমেছে ময়লা। ভবন থেকে খসে পড়ছে পলেস্তরা। মরিচা গিলে খাচ্ছে লোহার গ্রিলগুলো। আবার দুর্বৃত্তদের থাবায় ভেঙে পড়েছে জানালার কাচ। ময়লা আবর্জনার স্তূপ জমেছে ভবনের চারপাশে। নষ্ট হচ্ছে ভবনের মূল্যবান আসবাবপত্র ও যন্ত্রপাতি। নেই পানির ব্যবস্থা। ভবনের নিরাপত্তায় নেই কোনো নৈশপ্রহরী।
সূত্র মতে, অত্যাধুনিক এ হাসপাতালে চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ডবয়, অফিস সহকারী, ল্যাব অ্যাটেনডেন্টসহ ১৩টি পদ রয়েছে। উদ্বোধনের ৫ বছর অতিবাহিত হলেও কোনো পদে লোক নিয়োগ দেয়া হয়নি। জগদল ইউনিয়নের রায়বাঙ্গালী গ্রামের মাসুক মিয়া জানান, এলাকার অধিকাংশ মানুষ দরিদ্র। চিকিৎসা নিতে দূরে যাওয়ার সামর্থ্য নেই। এটি চালু হলে এলাকার মানুষ খুবই উপকৃত হবে। জগদল গ্রামের সুহেল মিয়া জানান, বর্ষাকালে রাতের বেলায় কেউ অসুস্থ হলে চিকিৎসাসেবা প্রদান করা যায় না। দিন হলে হাওর পাড়ি দিয়ে চিকিৎসা নিতে হয়।
জগদল ইউপি চেয়ারম্যান শিবলু আহমেদ বেগ জানান, হাসপাতালে ডাক্তার না থাকায় দরিদ্র মানুষগুলো চিকিৎসাবঞ্চিত। এ অঞ্চলের মানুষের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতের জন্য দ্রুত জনবল নিয়োগ দেয়ার দাবি জানান ইউপি চেয়ারম্যান। দিরাই উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. হাসিবুর রহমান জানান, হাসপাতালটি উদ্বোধন করা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু জনবল নিয়োগ দেয়া হয়নি। যার ফলে চিকিৎসক সংকটের কারণে এর কার্যক্রম চালানো সম্ভব হচ্ছে না। এই বিষয়টা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। সুনামগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. আশুতোষ দাস জানান, এখানে কোনো লোকবল নিয়োগ দেয়া হয়নি। যার ফলে চিকিৎসা কার্যক্রম চালু করা সম্ভব হয়নি।